২৪খবর বিডি : ' কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সুন্দরবনের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের অবস্থা দেখতে তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিন্সেস মেরি। সোমবার সকালে তিনি ঢাকার
* শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন তাকে স্বাগত জানান। সফরের প্রথম দিনই গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ডেনিশ রাজকুমারী। দুপুরে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে তার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে ডেনমার্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় একটি সহযোগিতা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ‘সাসটেইনেবল অ্যান্ড গ্রিন ফ্রেমওয়ার্ক এনগেইজমেন্ট’ শীর্ষক ওই সমঝোতা স্মারকে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এবং ডেনমার্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ফ্লেমিং মুলার। সেখানে ডেনিশ মন্ত্রী মুলারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। আলোচনায় উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক উঠে আসে।
' স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে মোমেন বলেন, এটা একটা জেনারেল ফ্রেমওয়ার্ক। এটার অধীনে আমরা অনেকগুলো অ্যাকশন প্রোগ্রাম নিবো। ডেনমার্ক ক্লাইমেট ইস্যুতে খুবই উচ্চকণ্ঠ। আর আমরা ক্লাইমেট ইস্যুতে ভালনারেবল শুধু না, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতিও। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও অভিযোজনের কাজের ক্ষেত্র এ ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে উন্মোচন করা হবে বলে জানান তিনি। এর আওতায় কী ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সহযোগিতা কার্যক্রমে কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। ' যত ধরনের কাজ আছে, আমরা প্রয়োজনীয়তা জানাতে পারবো। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন অর্থ, প্রযুক্তি, বিশেষজ্ঞ জ্ঞান দিয়ে। এক্ষেত্রে তারা অগ্রগামী দেশ।
ঢাকায় এসেছেন ডেনমার্কের রাজকুমারী
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দেশে বেশি পরিমাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি চাই। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি করতে চাই। বায়ু বিদ্যুৎ, সৌর বিদ্যুতে ডেনমার্কের ভালো এক্সপার্টিজ আছে। তারা আমাদের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এদিকে ডেনমার্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা মন্ত্রী মর্টেনসেনকে উদ্ধৃত করে এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক এজেন্ডায় ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের শক্তিশালী ও সক্রিয় সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে দেয়া প্রতিশ্রুতিকে কাজে পরিণত করার দিকে যাওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছে, আজকে সই হওয়া এ গ্রিন ফ্রেমওয়ার্ক দলিল। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সহযোগিতার প্রসঙ্গে দুই মন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে যে ওই এলাকার গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তারা সে ব্যাপারে সচেতন। সেখানকার জলবায়ু ইস্যুতেও তারা আমাদের সহায়তা করবেন।
* মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া সরকার যে মামলা করেছে, সেখানে সহযোগিতা দিতে ডেনমার্ককে আহ্বান করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, গাম্বিয়াকে সেখানে সাহায্য করেন, যাতে জেনোসাইড পৃথিবীর কোথাও আর না হয়। সেটাতে তিনি সায় দিয়েছেন। আশা করি, তারা সহায়তা দেবে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য ডেনমার্কের ২০ লাখ ইউরো সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, এ বিষয়ে তারা খুব সোচ্চার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মিলে তারা তাদের জায়গা থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা করার তা করছে। তারা সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্য হবে, সেখানে তাদেরকে জোরালো ভূমিকা রাখার অনুরোধ আমরা জানিয়েছি। পরে বিকালে কক্সবাজার যান রাজকুমারী। মঙ্গলবার তার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার কথা আছে। বুধবার কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে করে সুন্দরবন এলাকায় যাবেন ক্রাউন প্রিন্সেস। সেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশাপাশি বন সংরক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। বুধবার রাতেই তুর্কি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রাজকুমারী মেরির তুরস্কের ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে যাত্রার কথা রয়েছে।